তামাকপণ্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ: শিল্প মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতিক্রিয়া



বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে বিড়ি-সিগারেটসহ সব তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রি সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব খাইরুল আলম শেখ ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’এর  ক্ষমতাবলে এই নির্দেশ জারি করেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে। ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং কাশিজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণা পর্যালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়াও গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ধূমপায়ীর মৃত্যুঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি।
এ প্রসঙ্গে তামাক বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ-এর পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তুহিন সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ সিদ্ধান্ত কিছুটা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে তাদের পরামর্শ তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চ হারে ট্যাক্স বসিয়ে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা যায় । 
ওদিকে, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি জনাব আমিন উদ্দিন বিএসসি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে অনেকটা হাস্যকর বলে উল্লেখ করে রেডিও তেহরানকে বলেন, গ্রামের যে মানুষগুলো বিড়ি বা তামাক সেবন করেন তাদের চেয়ে রাজধানীর মতো শহরে বেশী মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আসলে অর্থকরী ফসল তামাক বা বিড়ি নিয়ে এদেশে অনেককাল ধরেই ‌এরকম কথাবার্তা হচ্ছে।  তবে সরকার যদি তামাক বা বিড়ি একেবারে নিষেধ করতে চায় তবে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ও হাজার হাজার চাষীর পুনর্বাসন এবং বিকল্প আয়ের সংস্থান করতে হবে সরকারকেই। তা না হলে একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
এর  আগে করোনাজনিত  লক-ডাউনের মধ্যে “জরুরী খাদ্যদ্রব্যের “ফোকর দিয়ে  সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের বাজার ও দোকান চালু রাখে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলো। এ নিয়ে তামাক-বিরোধী জোট সরকারের সাথে দেনদরবার করে।
এরপর তামাক কোম্পানিগুলোর উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ। একই সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় এগিয়ে নিতে এ ব্যাপারে  শিল্প মন্ত্রণালয়েরও  সহযোগিতা কামনা করেছে।
সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত এ নির্দেশকে প্রত্যাখ্যান করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। শিল্প সচিব আজ বিকেলে জানিয়েছেন, ‘'হঠাৎ করে একটা চিঠি দিয়ে এটা স্থগিত করা, আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটা যৌক্তিক হলো না।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পাল্টা চিঠিতে শিল্প মন্ত্রণালয় লিখেছে, এটা এখন বন্ধ করা সমীচীন হবে না বা যৌক্তিক হবে না। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠান চালু রাখার বিধিবিধান মেনে যেভাবে তামাক কোম্পানিগুলো চলছিল, সেভাবেই এখনো চলবে বলেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’   
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাময়িকভাবে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, সীসা বার, বা  উন্মুক্ত স্থানে পানের পিক ফেলার মতো বিষয়গুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। #
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/২০
Previous
Next Post »